বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:৩৮ পূর্বাহ্ন

কালিয়াকৈরে মামলা না নিয়ে মিমাংসার তাগিদ

কালিয়াকৈর প্রতিনিধি::

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে নিজেকে রক্ষায় ৯৯৯-এ কল দিয়ে উল্টো বিপদে পড়েছে হামলার শিকার হয়ে গর্ভপাতকারী এক গৃহবধু। ঘটনার ৯ দিন কেটে গেলেও গত বুধবার পর্যন্ত মামলা নেয়নি পুলিশ। উল্টো ফাঁড়িতে সালিশ বৈঠকে মিমাংসার তাগিদ দিচ্ছে পুলিশ, অভিযোগ তোলে নিতে প্রতিপক্ষও দিচ্ছে হুমকি। নিরাপত্তা জনিত কারণে হাসপাতাল থেকে নিজ বাড়ি যেতে পারছে না ওই গৃহবধু।

এলাকাবাসী, পুলিশ ও হামলার শিকার গৃহবধু সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ অক্টোবর রাঁত ৮টার দিকে কালিয়াকৈর উপজেলার ঠাকুরপাড়া এলাকায় বাড়িতে একা পেয়ে অন্ত:সত্ত্বা গৃহবধু মাসুমা আক্তারের উপর নির্যাতন চালানো হয়। তার দেবর সাগরের শ্বশুর সাইফল ইসলাম, শ্বাশুড়ী নাসিমা বেগম, খালাশ্বাশুড়ী আকলিমা বেগম ও স্ত্রী শারমিন আক্তার লাঠি-সোটা নিয়ে তার উপর অর্তকিত হামলা চালায়। এসময় তারা ওই গৃহবধুর তলপেটসহ এলোপাথারি মারধর করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে তারা মোটরসাইকেল, গ্যাসের চুলাসহ বিভিন্ন মালামাল ভাংচুর চালায় এবং ঘর থেকে ৪৭ হাজার টাকা লুট করে। তার ডাক-চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে তাকে খুন-জখমের হুমকি দিয়ে তারা পালিয়ে যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে এলাকাবাসী। পরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সেখান থেকে তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এদিকে নিজেকে রক্ষায় ওই গৃহবধু ৯৯৯-এ কল দিলে রাতেই মৌচাক ফাঁড়ি পুলিশের এএসআই সাইফুল ইসলাম ঘটনার তদন্তে যান। এ ঘটনায় ওই গৃহবধু মাসুমা আক্তার বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু ওই পুলিশ কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রতিবেশী মোবারক হোসেন আর্থিক সুবিধা নিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালায়। পরে ওই কর্মকর্তা ও মোবারক হোসেন কৌশলে বাদী-বিবাদী পক্ষকে পুলিশ ফাঁড়িতে ডেকে সালিশ বৈঠক বসায়। ওই বৈঠকে বিবাদীকে ৫৬ হাজার টাকা জরিমানা করার রায় দেন এএসআই সাইফুল ইসলাম। এছাড়াও ওই পুলিশ কর্মকর্তা ও প্রতিবেশী মোবারক হোসেন গত ২৪ অক্টোবর কৌশলে ১নং আসামী দিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করায়। কিন্তু হামলার শিকার হয়ে গর্ভপাতের ঘটনাটি নিশ্চিত হলে গত ২৫ অক্টোবর ওই গৃহবধু মাসুমা বাদী হয়ে থানায় আরেকটি অভিযোগ দায়ের করেন। এ হামলার ঘটনার ৯ দিন পেরিয়ে গেলেও গত বুধবার পর্যন্ত পুলিশ মামলা নেয়নি। উল্টো বাদীকে মিমাংসার তাগিদ দিচ্ছে পুলিশ, অভিযোগ তোলে নিতে প্রতিপক্ষও দিচ্ছে হুমকি। নিরাপত্তা জনিত কারণে হাসপাতাল থেকে নিজ বাড়ি যেতে পারছে ওই গৃহবধু। তিনি এখন ঢাকার উত্তরার উত্তরখানপাড়া তার বাবার বাড়িতে আছেন।

ওই গৃহবধু মাসুমা আক্তার জানান, ৯৯৯-এ ফোনে অভিযোগ দিলেও পুলিশ ফাঁড়িতে সালিশ বৈঠক বসায়। এতে রাজি না হলে বিবাদী পক্ষ অভিযোগ তোলে নিতে নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছে। পুলিশও মিমাংসা হতে বলছেন। এছাড়া দুই মাসের অন্ত:সত্ত্বা ছিলাম, পেটের বাচ্চাটিও নষ্ট হয়ে গেছে। হাসপাতাল থেকে সকল কাগজপত্র নিয়ে গেলেও পুলিশ এখনো মামলা নেননি। এখন তাদের ভয়ে বাড়ি যেতে পারছি না। হাসপাতাল থেকে বাবার বাড়ি চলে আসছি।

কালিয়াকৈর থানাধীন মৌচাক ফাঁড়ি পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সাইফুল ইসলাম জানান, যেহেতু নিজেরা নিজেরা তাই ফাঁড়িতে বসে বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা করেছিলাম। তবে কারো কাছ থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা নেওয়া হয়নি।

ওই পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (ওসি) মনিরুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় থানায় তিনটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে ফাঁড়ি সালিশ বৈঠকের বিষয়টি আমার জানা নেই।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com